আকাশ খান (জেলা প্রতিনিধি )
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জিনজিরাম নদীর ওপারের এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং বিদ্যুৎ সুবিধার অভাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান ছিল অত্যন্ত নাজুক। তবে, একটি নতুন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অন্ধকার দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের পদ্ধতি
জিনজিরাম নদীর ওপারে স্থাপিত সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল, যা সূর্যের আলো থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলা হয়েছে। সৌর প্যানেলের মাধ্যমে উৎপন্ন বিদ্যুৎ প্রথমে একটি ব্যাটারি সিস্টেমে সঞ্চিত হয়। এরপর এই বিদ্যুৎ স্থানীয় বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়।
সুফল
১. বিদ্যুৎ সরবরাহ: বিদ্যুতের অভাবে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি পোহানো এই অঞ্চলের মানুষ এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। এটি তাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করেছে।
২. শিক্ষার প্রসার: রাতে পড়াশোনার জন্য বিদ্যুতের অভাবে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ত। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর ফলে এখন শিক্ষার্থীরা নিরবচ্ছিন্ন আলো পেয়ে পড়াশোনা করতে পারছে।
- স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হয়েছে:* স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুতের কারণে ফ্রিজে ওষুধ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য চিকিৎসাসেবা উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।
৪. ব্যবসায়িক কার্যক্রম: স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ায় নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৫. পরিবেশ রক্ষা: সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশের উপর কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না। এটি জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে। চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
সৌর প্রকল্পটি সফল করতে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেমন, স্থানীয় জনগণের প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা। তবে, স্থানীয় প্রশাসন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে এই সমস্যা মোকাবিলা করেছে। পরিশেষে ভাবনা
জিনজিরাম নদীর ওপারের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়, বরং এটি পুরো অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রকল্পটি কেবল কুড়িগ্রামের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়ন সংস্থা, এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।