বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে, যখন ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। এই আন্দোলনটি এক যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, কারণ এর মাধ্যমে ছাত্র সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বৃহত্তর রাজনীতিতে জোরালো উপস্থিতি তৈরির পথ খুলেছে। ছাত্ররা শুধু শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়নি, বরং দেশের সুশাসন, ন্যায্যতা এবং দমনপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য সোচ্চার হয়েছে।
এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে, বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে এবং নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে ছাত্র আন্দোলনের এই জয় তাদের শুধু আন্দোলনকারী হিসেবে নয়, রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিছু সূত্র জানিয়েছে, ছাত্ররা এখন প্রধানমন্ত্রী পদে তাদের নেতৃত্ব দেখতে চায়। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের দলের পক্ষে ত্যাগ, সংগ্রাম ও সৃজনশীলতার জন্য পরিচিত, এবং তারা মনে করেন, দেশের নেতৃত্বে তাদের ভূমিকা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
তবে এই নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা বলছেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করার আগে তাদের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন। তারা মনে করেন, ছাত্রদের নেতৃত্বের গুণাবলী যেমন সততা এবং আন্দোলনে নিষ্ঠা, তা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, রাজনীতির জটিলতা এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট মোকাবেলা করতে অভিজ্ঞ রাজনীতিকদেরই প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ছাত্ররা এই সমালোচনার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা বলছে, প্রথাগত রাজনীতি অনেকাংশেই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দেশের জন্য কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ছাত্ররা নিজেদের নবীন চিন্তা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। তারা বিশ্বাস করে যে, নতুন নেতৃত্ব আসলে দেশকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত করতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হলো, এই ছাত্র আন্দোলন কি শুধু প্রতিবাদ এবং পরিবর্তনের এক ধাপ, নাকি তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে? দেশের জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে তাদের প্রতি রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে, বলাই যায় যে, এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। ছাত্রদের শক্তি ও আকাঙ্ক্ষা একদিকে যেমন নতুন দিশা দেখায়, তেমনি তারা কি বাস্তব রাজনীতি চালানোর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত, তা সময়ই বলে দেবে।
শেষ কথা: ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা এবং তাদের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে চলমান আলোচনা প্রমাণ করছে যে, বাংলাদেশে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব হয়তো আর দূরের কথা নয়। তবে, কেবল আন্দোলন নয়, এর সাথে যুক্ত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।