তানিম আহমেদ নালিতাবাড়ি (প্রতিনিধি)
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন ও পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গত ছয় মাসে উপজেলায় পরিচালিত ১০০টিরও বেশি মোবাইল কোর্টের অভিযানে ৬০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা আদায় এবং ৩৫ জন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ববি এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী, দুদুয়ার খাল এবং বুড়ীভোগাই নদীর বিভিন্ন অবৈধ বালু উত্তোলন স্পটে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন ২০২৩ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নালিতাবাড়ী উপজেলার নদী-নালা, পাহাড়, টিলা এমনকি ফসলি জমির ভেতরেও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা নতুন নতুন স্পট তৈরি করে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করে। শুধুমাত্র ভোগাই নদীর নালিতাবাড়ী অংশে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার জুড়ে বালুর অসংখ্য অবৈধ স্পট রয়েছে। পুরো উপজেলায় এরকম প্রায় ১০০টি অবৈধ বালু স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত ছয় মাসে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের অভিযানে ৭৫টি মামলার মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। একই সাথে, ৩৫ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযানে জব্দকৃত বালু নিলামের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে উপজেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত ছয় মাসে উপজেলা প্রশাসন ১০০টিরও বেশি দীর্ঘ অভিযান পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে কিছু অভিযান ৬ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চলেছে। নিয়মিত মামলার পাশাপাশি বালু সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, অভিযোগের শুনানি এবং সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন ও প্রচারণার কাজও চলমান রয়েছে।
এই অভিযানে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার এবং স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা সহযোগিতা করেছেন।স্থানীয় জনগণ মনে করে, এই অভিযান শুধু নদী ও পরিবেশ রক্ষা করছে না, বরং এলাকার আইনশৃঙ্খলা এবং অবকাঠামো উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা প্রশাসনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ভবিষ্যতে নিয়মিত তদারকি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি জানান, নদী রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় তারা “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করছেন এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবেন। তিনি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং নালিতাবাড়ীর সচেতন নাগরিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।এই জোরালো পদক্ষেপ নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।