কিশোরগঞ্জসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। অথচ শত বছর আগে, এক অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল—যা এখন প্রায় বিস্মৃত।
বলা হয়ে থাকে, ব্রিটিশ আমলে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ ধরনের ধাতব বস্তু, বিশেষ করে পরিত্যক্ত মর্টার শেল, মাটির নিচে পুঁতে রাখা হতো। এগুলো বজ্র নিরোধক হিসেবে কাজ করত। বজ্রপাত হলে শেলগুলো বৈদ্যুতিক চার্জকে ভূমিতে সরাসরি নির্গত করে দিত, ফলে মানুষের, গবাদিপশুর কিংবা ঘরবাড়ির তেমন ক্ষতি হতো না। এটি এক ধরনের প্রাচীন “গ্রাউন্ডিং সিস্টেম” ছিল।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বর্তমান সময়ে এসব মর্টার শেল অজান্তেই মাটি খুঁড়ে তুলে ফেলা হচ্ছে। কেউ কেউ ভাঙারির দোকানে বিক্রি করছেন, কেউ আবার এগুলোর ব্যবহার বা ঝুঁকি না বুঝেই সংগ্রহ করছেন। এতে শুধু বজ্রপাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ধ্বংস হচ্ছে না, বরং এসব বিস্ফোরক উপাদান সরানোর মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে অনেকে বলছেন, আগে বজ্রপাত হতো ঠিকই, কিন্তু এত মানুষের মৃত্যু হতো না। এখন মর্টার শেলগুলো মাটি থেকে সরিয়ে ফেলার পর থেকেই বজ্রপাত আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরাও বলছেন, মাটির নিচে স্থায়ী ধাতব বস্তু বজ্রপাতের চার্জ মাটিতে গ্রাউন্ড করতে সাহায্য করে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন সচেতনতা। মর্টার শেলের মতো বস্তু কোথাও পাওয়া গেলে তা নিজেরা সরানোর চেষ্টা না করে দ্রুত প্রশাসন বা সেনাবাহিনীকে জানানো উচিত। পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলে আধুনিক বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন, গবাদিপশু ও কৃষকদের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার।
বজ্রপাত কোনো সাধারণ দুর্যোগ নয়—এটি প্রতিরোধযোগ্য, যদি আমরা সচেতন হই এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টিকে দেখি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেমন উপায় খুঁজে বের করেছিলেন, তেমনি আমাদেরও প্রয়োজন সেই শিক্ষা থেকে পথ খোঁজা।
নিজের অজ্ঞতা দিয়ে নিজের ক্ষতি যেন না হয়, সেই সচেতনতাই হোক আজকের অঙ্গীকার।