নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিক হাসান
কুমিল্লা, ৩১ মে ২০২৫
গত কয়েকদিন ধরে কুমিল্লা জেলায় টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের ফলে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় কুমিল্লা জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও মুরাদনগর উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে অনেক গ্রামবাসী ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে কান্দিরপাড়, রেইসকোর্স ও ধর্মসাগর পার এলাকায় পানির নিচে সড়ক তলিয়ে গেছে, যা যানবাহন চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যার আশঙ্কা
গোমতী ও ছোট ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে। এতে করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি ইউনিয়নে নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত কুমিল্লা ও আশেপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকবে ৯০ শতাংশের ওপরে।
প্রশাসনের উদ্যোগ ও ব্যবস্থা
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২০টিরও বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, “আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কোথাও যদি কেউ বিপদে পড়ে, তাহলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।”
সতর্কতা ও পরামর্শ
নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় না থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কেউ বিপদে পড়লে উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদে দ্রুত যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার:
কুমিল্লার মানুষ বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে। বৃষ্টিপাতের কারণে চাষাবাদ ও দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা দেখা দিলেও প্রশাসন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।