রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম), ১২ জুন ২০২৫
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার চর লাঠিয়াল ডাঙ্গা গ্রামের মোঃ ইসহাক আলীর মেয়ে নার্গিস (২৫) এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার। বিগত সাত বছর আগে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজিব পুর উপজেলার বালিয়ামাড়ি গুচ্ছগ্রামের মোঃ মতিউর রহমানের ছেলে সুজন মিয়ার (২৭) সঙ্গে। বিয়ের কিছুদিন পরই তার স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন এবং নার্গিসের ওপর শুরু হয় নির্মম নির্যাতন।
স্বামী সুজন নিয়মিত হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল ও অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্য সেবন করতেন। সে সময় নার্গিসের উপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের খেলা। অনেক সহ্য করার পর একপর্যায়ে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে নার্গিস শেষমেশ তাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হন। তবে ডিভোর্সের পরও সুজন মিয়া তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। অভিযোগ উঠেছে, সে গোপনে তাদের দাম্পত্য জীবনের গোপন মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে রেখেছিল এবং এখন সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সে নার্গিসসহ তার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। নার্গিসের পরিবার জানিয়েছে, তারা ভীষণ আতঙ্কে আছেন। প্রতিনিয়ত হুমকি, গালিগালাজ ও অপমান এবং বাড়িতে থেকে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি সহ্য করতে না পেরে বর্তমানে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এ ধরনের কাজের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। নার্গিসের অভিযোগ অনুযায়ী, সুজন মিয়া যে অপরাধ করেছে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৪, ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় শাস্তিযোগ্য। এসব ধারায় গোপন ভিডিও ধারণ ও তা প্রকাশের হুমকি, মানহানিকর তথ্য ছড়ানো এবং ডিজিটাল মাধ্যমে হুমকি দেওয়া—এসব অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১০ ধারায় মানসিক নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর ৮ ধারায় গোপন ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল এবং জরিমানা হতে পারে।এখন পর্যন্ত নার্গিস থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারা দ্রুত মামলা করারও চিন্তা করছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এমন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সমাজে নারীদের প্রতি এই ধরনের সাইবার সহিংসতা ও ব্ল্যাকমেইল দিন দিন বাড়তেই থাকবে।