নদীর তীরে মিললো নিখোঁজ সুকর্নার লাশ: নীরবতার অন্ধকারে হারিয়ে গেলো আরেকটি স্বপ্ন
ভোলা, ২৭ জুন ২০২৫
চার দিন আগে ভোলা থেকে ঢাকাগামী একটি লঞ্চে উঠে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল কর্মী সুকর্না আক্তার ইপ্সিতা’র মরদেহ অবশেষে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর তীরে ভেসে উঠলো।
লাশটি স্থানীয়দের নজরে আসে গতরাতে। পরে পরিচয় শনাক্ত হলে খবর পায় তার পরিবার। পুলিশের প্রাথমিক তথ্য মতে, ইপ্সিতা একটি চলন্ত লঞ্চে গণধর্ষণের শিকার হতে পারেন এবং সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নির্মম ঘটনাটি আমাদের সমাজকে আরেকবার মনে করিয়ে দেয়—নারী কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি ঘনিষ্ঠ পরিচিত পরিবেশেও নয়। যে লঞ্চ তাকে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল, সেটিই হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনের শেষ যাত্রার পথ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও আমাদের নীরবতা
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরেও তেমন কোনো অনুসন্ধানমূলক তৎপরতা চোখে পড়েনি। শেষমেশ যখন লাশটি নদীর তীরে ভেসে উঠে, তখনও তা বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি এবং নিখোঁজ ডায়েরির পরও অনুসন্ধান শুরু করেনি।
এ থেকেই প্রতীয়মান হয়—নারীর জীবনের মূল্যায়ন আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রে কতটা অবহেলিত!
একটি প্রশ্ন—আমরা কি আরেকটি সুকর্নার জন্য অপেক্ষা করছি?
একজন শিক্ষিত, সংগঠক ও স্বপ্নবাজ মেয়ে নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে—এই দৃশ্য যেন আমাদের বিবেককে আরেকবার নাড়া দেয়।
আমরা, সামাজিকভাবে, পরিবারিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে—কতটা ব্যর্থ হলে এমন একটি ঘটনা ঘটে?
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীর প্রতি সম্মান, নিরাপত্তা ও সচেতনতা নিয়ে কার্যকর শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি?
ঘাট, টার্মিনাল ও লঞ্চে নারীদের নিরাপত্তায় কেমন তদারকি আছে?
আমরা কী করতে পারি?
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।
নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লঞ্চ, বাস, ও গণপরিবহনে কার্যকর ক্যামেরা ও কন্ট্রোল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
পরিবার ও সমাজকে মেয়েদের বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হতে হবে, যাতে তারা নির্ভয়ে ঘটনা জানাতে পারে।
স্কুল-কলেজে নিয়মিত ‘জেন্ডার সচেতনতা’ ও আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে।
শেষ কথা:
সুকর্না ইপ্সিতা আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তার করুণ মৃত্যু যেন নতুন করে আরও একটি জীবন রক্ষা করার প্রেরণা হয়।
আমরা যদি এখনই না জাগি, তাহলে এমন মৃত্যু আরও অনেক অপেক্ষা করছে—নদীর তীরে, শহরের গলিতে, নির্জন বাসে কিংবা বন্ধ ঘরে।