বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যর্থতার মিছিল যেন থামছেই না। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ১০৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে যেভাবে বাংলাদেশ ধসে পড়ে, তা দেশবাসীর হৃদয়ে নতুন করে হতাশার ছাপ ফেলে। যদিও তানজিম হাসান তামিম শুরুতে কিছুটা আস্থার পরিচয় দেন, কিন্তু মিডল অর্ডারে হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং লিটন দাসের ব্যর্থতা পুরো ইনিংসকে ভেঙে দেয়। শেষদিকে দুই উইকেটে সামান্য আশার আলো দেখা গেলেও তা ধুয়ে-মুছে যায় শ্রীলঙ্কার সুসংগঠিত বোলিং আক্রমণে।
এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার দায় শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দীর্ঘদিনের ভুল সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনার অভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির সংকট।
🔍 বিসিবির অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতা:
১. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব:
বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোনো স্থায়ী পরিকল্পনার ছাপ নেই। খেলোয়াড় উঠে আসে, পারফর্ম না করলে বাদ—আবার হঠাৎ ফেরত আসে। দল নির্বাচনে নেই কোনো ধারাবাহিকতা, নেই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা।
২. অবিবেচক দল নির্বাচন ও রোটেশন:
দলের অভিজ্ঞদের ওপর অন্ধ বিশ্বাস আর তরুণদের প্রতি অবিচার—এই দ্বৈত মানসিকতা বারবার সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বারবার দল গঠন ও ভাঙনের কারণে দল হারায় আত্মবিশ্বাস ও রসায়ন।
৩. কোচ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনিশ্চয়তা:
কোচিং স্টাফদের বারবার পরিবর্তন, দায়িত্বের অস্পষ্টতা এবং বিদেশি কোচদের সঙ্গে বোর্ডের সুষ্পষ্ট সমন্বয়হীনতা দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে।
৪. হাই-পারফরম্যান্স ইউনিটের ব্যর্থতা:
যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল ও একাডেমি টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতের তারকা তৈরি করে, সেখানে বাংলাদেশে তেমন কার্যকর হাই পারফরম্যান্স ইউনিট নেই বললেই চলে। একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
🛠 নতুন দিগন্তে বিসিবি কি পরিবর্তন আনতে পারবে?
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিবির উচিত:
✅ স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা (৫-১০ বছরের রোডম্যাপ)
✅ বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট ও ঘরোয়া লিগকে গুরুত্ব দেওয়া
✅ তরুণদের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করা
✅ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দল গঠন নিশ্চিত করা
✅ একটি স্বাধীন সিলেকশন কমিটি গঠন করা যারা পারফরম্যান্স ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবে
📌 উপসংহার:
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ভক্তদের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে কেবল ক্রিকেটার বদল নয়, বরং পুরো কাঠামোতে বদল আনতে হবে। বিসিবির উচিত এখনই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে একটি পরিকল্পিত ও পেশাদার ক্রিকেট কাঠামো গড়ে তোলা। নাহলে “প্রতিভা আছে কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই”—এই তকমা নিয়েই বিশ্বমঞ্চে ধুঁকতে থাকবে বাংলাদেশ।