গত ১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের সূচনা হয় এবং দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন দলের আমির।
অতীতের ত্যাগের কথা স্মরণ
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “গত ১৫ বছরের দুঃসহ অন্ধকার সময়ে যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা নিখোঁজ হয়েছেন—তাঁদের প্রতি আমরা চিরঋণী। জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, আমরা তাঁদের ঋণ শোধের চেষ্টা চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “আবু সাঈদদের মতো শহীদরা বুক পেতে না দাঁড়ালে, এই জাতির মুক্তি সম্ভব হতো না। তাদের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। এই ত্যাগের কথা ভুলে গেলে আমরা নিজেরাই ফ্যাসিবাদের অংশ হয়ে যাব।”
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
জামায়াত আমির বলেন, “আমরা যেন তাঁদের অবদানকে অবজ্ঞা না করি, তুচ্ছ ভাবি না। অহংকার করে অন্য দলকে তাচ্ছিল্য না করি। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। নইলে বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদের রূপ আমাদের ভেতরেই বাসা বেঁধেছে।”
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও অঙ্গীকার
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “যদি জামায়াতে ইসলামী দেশের সেবা করার সুযোগ পায়, আমরা মালিক হব না, সেবক হব। কোনো এমপি বা মন্ত্রী সরকারি প্লট নেবেন না, ট্যাক্সমুক্ত গাড়িতে চলবেন না, নিজের হাতে কোনো সরকারি টাকা চালাবেন না।”
তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, “যে এমপি বা মন্ত্রী কোনো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাবেন, কাজ শেষ হওয়ার পর ১৮ কোটি মানুষের কাছে তার জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। চাঁদা আমরা নেব না, নিতেও দেব না। দুর্নীতি করব না, সহ্যও করব না।”
জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ অবস্থান
ডা. শফিক বলেন, “আমি শিশুদের বন্ধু, তরুণদের ভাই, বয়স্কদের সহযোদ্ধা। আমি এসেছি মাঠের কৃষক, রিকশাচালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও শ্রমজীবী মানুষের কথা বলতে—not কোনো অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে।”
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মনিবেদন
তিনি বলেন, “জীবনভর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছি, জেল-জুলুমের ভয় করিনি। আফসোস—২০২৪ সালের লড়াইয়ে শহীদদের কাতারে আমি থাকতে পারিনি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সেই লড়াইয়ে আমিও একজন শহীদ হতে পারি।”
বিচার দাবি ও নতুন বাংলাদেশের আহ্বান
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে শাপলা চত্বর গণহত্যা, পিলখানার হত্যাকাণ্ড এবং ২০২৪ সালের গণহত্যা যারা চালিয়েছে—তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হতেই হবে। এ দেশের মানুষ শুধু জানে ক্ষমা নয়, ন্যায়বিচার।”
সমাবেশের শেষদিকে তিনি বলেন, “পুরনো, পচাগলা শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশ আর চলবে না। শহীদরা জীবন দিয়েছেন কোনো পুরনো শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য নয়। যদি কেউ সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে বলি—জুলাইয়ের শহীদদের জীবন ফিরিয়ে দিন, যদি পারেন।”